শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়াতে কী করবেন?

 
শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগী করার  ১০টি দুর্দান্ত কৌশল ও উপায়-

"শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগী করার  ১০টি দুর্দান্ত কৌশল ও উপায়-
আজকালকার বেশিরভাগ বাবা-মায়ের অভিযোগ, তাদের শিশুরা সহজে পড়ালেখা করতে চায় না। তাই আজ আমরা জানবো কিভাবে শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগী করা যায়। তার দারুন কিছু কৌশল।

শিশুদের পড়ালেখায় কিভাবে মনোযোগী করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অনেক বাবা-মা। তাদেরকে কিছুক্ষণ একটানা বইখাতা নিয়ে বসাতে গেলেই ঘটে নানান বাহানা চিত্র। নানা অজুহাতে পড়ার সময়টা পার করতে পারলেই যেনো শিশুরা বেঁচে যায়। আপনার ঘরে যদি কোন ছোট্ট শিশু থেকে থাকে তাহলে এই ঘটনা আপনার কাছে নিশ্চয়ই নতুন কিছু নয়। 

তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। একটু চেষ্টা করলেই আপনার আদরের শিশুটির এই হারিয়ে যাওয়া আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে পারবেন। আজকে আমরা জানবো কিভাবে আপনার শিশুকে পড়াশোনায় মনোযোগী করবেন। তা নিয়ে বিস্তারিত,

১০টি কৌশল অবলম্বন করে শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগী করুন

১। খেলার ছলে পড়ানো
শিশুরা খেলাধূলা করতে খুবই পছন্দ করে। আর আপনি যদি পড়ালেখাকেই খেলার একটি অংশ হিসেবে শেখান তবে আপনার শিশুর পড়াশোনার প্রতি বিরক্তি আসবেনা। ছোট্ট শিশুদের খেলতে খেলতে অনেক কিছু শেখানো যায়। এতে তাদের কাছে পড়াশোনা ভিতিকর মনে হয় না বরঞ্চ তারা আরো মনোযোগী হয়। তবে কিভাবে আপনার শিশুকে পড়াবেন সেটা আপনাকে কিছুটা অনুশীলন করে নিতে হবে।

২। গল্পের ছলে পড়ানো
গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে আর শিশুরাতো গল্প পেলেই বাকি সব ভুলে যায়। পড়ালেখা ব্যাপারটাও ঠিক গল্প আকারে সাজিয়ে ফেলুন। এতে শিশুদের পড়ালেখার প্রতি ভিতি অথবা অনীহা কোনটাই সৃষ্টি হবে না। বরং তারা আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা করবে এবং যেকোন পড়া শিখতে অথবা মনে রাখতে সহজ হবে।

৩। শিশুদের সাথে নিজেও পড়তে বসুন
শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তারা বড়দের যা করতে দেখে তাই করতে আগ্রহী হয়। আপনি যদি আপনার শিশুকে পড়তে বসানো সময় নিজেও একটু বই নিয়ে পড়তে বসেন তবে আপনার শিশু পড়াশোনাকে আর বিরক্তিকর মনে করবে না। তার কাছে তখন পড়াশোনা ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হবে।

৪। ছোট ছোট সফলতায় শিশুর প্রশংসা করুন
শিশুরা অল্প কিছুতেই অনেক বেশি খুশি হয়। আপনি যদি শিশুর ছোট ছোট সফলতায় তার প্রশংসা করেন তবেই সে পড়াশোনার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হবে। এবং ভবিষ্যতে আরো বেশি পড়াশোনা করতে চাইবে। আপনার ছোট্ট একটু প্রশংসা তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে দারুণভাবে ভূমিকা রাখে।

৫। প্রয়োজনীয় সময় নিন
বাড়িতে শিশুর লেখাপড়া শুরু করুন সংক্ষিপ্ত সেশন দিয়ে। পরে আস্তে আস্তে বড় সেশনে প্রবেশ করুন। আপনার যদি ৩০ মিনিট অথবা ৪০ মিনিটের সেশন করার লক্ষ্য থাকে, তবে ১০ মিনিটের সেশন দিয়ে শুরু করে সেখান থেকে বড় সেশনের জন্য তাদের প্রস্তুত করুন। এভাবে ধাপে ধাপে অনুশীলন একত্রিত করুন।

৬। সময়ের মূল্য দেওয়া
শিশুকে সময়নিষ্ঠা বিষয়ে উৎসাহিত করুন । শিশুদের সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা শেখানো দরকার, সময়মত প্রস্তুত হওয়া, দৈনিক সময়সূচী অনুসরণ করা এবং সময়নিষ্ঠ হওয়া শেখানো উচিত । তাদের সময়মতো স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন বুঝতে হবে, কারণ তারা সময়নিষ্ঠ না হওয়ার কারণে শাস্তি পেতে পারে । একটি পরিবার হিসাবে, আপনাকে বিভিন্ন কাজে, অনুষ্ঠান বা পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হতে পারে । প্রতিটি অনুষ্ঠানে আপনি সময়ের আগে বা সময়মত পৌঁছান, কারণ সন্তানরা বড় হওয়ার পর একই অভ্যাস গড়ে তুলবে । তারা তখন সময়ের মূল্য বুঝবে।

৭। শিশুদের পড়ালেখার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না
শিশুদের পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়ার সবচাইতে প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ। শিশুকে জোর করে পড়াতে বসালে পড়াশোনা তো হবেই না বরঞ্চ তাদের পড়াশোনার আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যায়। প্রথমদিকে তাদেরকে স্বাধীনভাবে পড়তে দিন। আপনার পছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের পছন্দকেই বেশি গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণ করার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।

৮। ভুলগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুন
আপনি যদি প্রথম থেকেই শিশুদের ভুলগুলোতে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন তবে তারা খুব সহজেই হতাশ হয়ে পরবে। অনেকেই আছেন শিশুর পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক বেশি কঠোর হয়ে যান। একই ভুল বারবার করতে থাকলে শিশুকে ধমক দেন অথবা যেকোন একটা শাস্তি দিয়ে দেন। মনে রাখবেন এই ভুলগুলো কিন্তু আপনার শিশুর সফলতায় পৌঁছানোর প্রথম ধাপ। আপনি যদি আজকে তাদের ভুল করার সুযোগ দেন তবে আগামীতে আপনার শিশুটি অনেক বেশি বিচক্ষণ হবে।

৯। ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করুন
যেদিন আপনার শিশুটি নিজে থেকে পড়তে বসবে সেদিন তাকে ছোট কিছু হলেও পুরস্কার দিন। এতে তারা পড়ালেখা ব্যাপারটাকে আরও আগ্রহের সাথে নেবে। পরবর্তীতে নিজে থেকে পড়তে বসার প্রবণতা বাড়বে। কারন সে দেখছে এটি একটি ভালো কাজ এবং তার জন্য সে পুরস্কৃত হচ্ছে।
 
১০। ঠিক সময়ে ঘুমনো
ঠিক সময়ে নিয়মিত ঘুমোতে যাওয়ার একটি রুটিন তৈরি করুন । ঘুম সদ্যজাত শিশুর জন্যও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আপনার শিশুদের শৈশবকালেই প্রাথমিকভাবে “তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা”-কে রুটিনে উত্থাপন করতে হবে । স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের প্রতিদিন সক্রিয় এবং অনলস হতে হবে, যার জন্য তাদের যথেষ্ট ঘুম প্রয়োজন । ঘুম সারাদিনে হারিয়ে যাওয়া শরীরের সব শক্তি বুদ্ধি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে । তাড়াতাড়ি ঘুমানো আপনার বাচ্চাদের যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে সহায়তা করবে, যাতে বাচ্চারা পরের দিন তাজা এবং সক্রিয় বোধ করে ।

পরিশেষে,
এই ছিলো শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগী করার কয়েকটি কৌশল নিয়ে আজকের লেখা। তবে বর্তমানে শিশুদের পড়াশোনার চাপ এবং প্রতিযোগিতা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে গেছে। তাদের ছোট্ট কোমল কাঁধে দিন দিন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে পড়ালেখার অতিরিক্ত বোঝা। এতে অনেক শিশুরাই পড়ালেখার প্রতি ক্রমশ আগ্রহী হারিয়ে ফেলছে। তাই বাবা মা হিসেবে আপনাকে আপনার শিশুর পড়ালেখার ব্যাপারে আরো বেশী ধৈর্যশীল" হতে হবে।


Next Post Previous Post