লেবুর খাওয়ার ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

লেবুর খাওয়ার ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

লেবুর খাওয়ার ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণ:
লেবু একটি জনপ্রিয় ফল যা ব্যবহারে খাবারের স্বাদে ভিন্নতা অনুভব হয়। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল একটি ৫৮ গ্রামের লেবু ৩০ মিলিগ্রাম এর বেশি ভিটামিন সি সরবরাহ করতে পারে ।ভিটামিন-সি সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য যার অভাবে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি পাতি লেবুর পুষ্টিগুন এর বিষয়বস্তু, লেবুর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা, খাবারের লেবুর ব্যবহারের উপায় এবং অতিরিক্ত লেবু খেলে তার  স্বাস্থ্য ঝুঁকি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

একটি লেবু আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালের কারণেই প্রধানত আমাদের কিডনিতে পাথর হয়। গবেষকরা বলছেন, দিনে দুবার ৪ আউন্স পাতিলেবুর রস খেতে হবে। ৩২ আউন্স টাটকা লেমোনেডও খাওয়া যেতে পারে। ২ আউন্স লেবুর রসের সঙ্গে ৬ আউন্স পানি মিশিয়ে নিতে হবে। সকালে ব্রেকফাস্টের আগে এবং রাতে শোয়ার আগে লেবুর রস খেয়ে নিতে হবে। এভাবে কয়েক দিন নিয়মিত খেলে কিডনির পাথর দুর হয়।

আমাদের কিডনির ভেতরের এই পাথরগুলো মূত্রনালির মাধ্যমে মূত্রথলিতে যাওয়ার চেষ্টা করে। পাথর যখন সংকীর্ণ নালির মধ্যে দিয়ে যায়, তখন প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনও কখনও নালিটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় অপারেশন ছাড়া পথ থাকে না। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব হাউস্টনের গবেষকরা বলছেন, লেবুর রসে হতে পারে মুশকিল আসান। লেবুর রসে হাইড্রক্সিসিট্রেট থাকে। যা কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। 

লেবু খাওয়ার ১০টি অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো
১. লেবুর রস শক্তি বাড়ায় । 
২. সুস্বাস্থ্য এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে।
৩. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে লেবুর রস।
৫.লিভার পরিষ্কার রাখে।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
৭. মূত্রনালির সংক্রমণ দূর করে।
৮. চোখ ভালো রাখে।
৯.ওজন কমায়।
১০ স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে 

১. লেবুর রস শক্তি বাড়ায়
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা দেহের সকল ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ করে এবং দেহের ভিতর শক্তি সঞ্চয় করে। বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন-সি গ্রহণ করা অথবা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা এই ধরণের ক্ষতি রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

২. সুস্বাস্থ্য এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে
ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন সিস্টেম গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের এক্সপোজার, দূষণ, বয়স এবং অন্যান্য কারণে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন-সি গ্রহণ করা অথবা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা এই ধরণের ক্ষতি রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৩. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
লেবু ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত হওয়ায় সাধারণ জ্বর, সর্দি জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে ।ভিটামিন-সি গ্রহণের ক্ষেত্রে সব সময় প্রাকৃতিক উপাদান কে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত। এটি গবেষণায় প্রমাণিত ।প্রাকৃতিক উপাদান যতোটুকু সহযোগিতা করে ভিটামিন সি পরিপূরক তা কোনভাবেই করতে পারেনা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অবশ্যই ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া উচিত। যেহেতু লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পরিমিত পরিমাণে লেবু সেবন করা শরীরের জন্য ভালো।

৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে লেবুর রস
পাতিলেবুতে আছে ভিটামিন সি আর ফাইবার, যা খালি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর সঙ্গে নিতে পারেন জিরা গুঁড়া যা হজমে সাহায্য করে। আর মধুতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা টক্সিন বের করে। অর্ধেক লেবু, ১ কাপ গরম পানি, ১ চা চামচ মধু ও ১/২ চা চামচ জিরা গুঁড়া নিন। গরম পানিতে লেবুর রস, মধু আর জিরা গুঁড়া মিশিয়ে নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে উপকার পাওয়া যায়। লেবুর রস- সকালে একগ্লাস হাল্কা গরম জলে গোটা একটা লেবুর রস টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। অন্ত্র পরিষ্কার রাখে। পরিপাকে সাহায্য করে।

৫. লিভার পরিষ্কার রাখে
শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার। লিভার ভালো থাকলে শরিরের সব কিছু ভালো থাকে। এটি আমাদের শরীরের সব চাইতে বড় কাজটি করে থাকে। দেহের যতো ক্ষতিকর টক্সিন জমে তা শুধুমাত্র লিভারের মাধ্যমেই শরীর থেকে বের হতে পারে। এই লিভার যদি তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই লিভার সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। লিভার ভালো রাখতে লেবু, রসুন ও আদার পানীয় বিশেষভাবে কাজ করে। লেবুর রস ঠাণ্ডা, সংক্রমণ, অ্যাথারোসক্লেরোসিসের সমস্যা দূর করে। এছাড়া লেবুর সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও লিভার পরিষ্কার রাখে। 

উপকরণ: পাঁচটি লেবু খোসাসহ, পাঁচটি রসুনের কোয়া, একটি আদা ও দুই লিটার পানি। একটি পাত্রে পানি নিয়ে লেবু, রসুন ও আদার টুকরোগুলো দিয়ে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে তরলটি একটি জগের মধ্যে নিন। লেবু, রসুন ও আদা ছেঁকে আলাদা করে রাখুন। এবার পানীয়টি ঠাণ্ডা হয়ে এলে পান করুন।

৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে
সকালবেলা উষ্ণ গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এই মিশ্রণ পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমার সঙ্গে লিভার ভালো রাখবে। প্রতিদিন সকালে গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করে থাকে। এ পদ্ধতিতে সাহায্য করে লেবু।  শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং অতি সহজেই ফ্যাট দূর হয়।

৭. মূত্রনালির সংক্রমণ দূর করে
 একটি লেবু আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালের কারণেই প্রধানত আমাদের কিডনিতে পাথর হয়। গবেষকরা বলছেন, দিনে দুবার ৪ আউন্স পাতিলেবুর রস খেতে হবে। ৩২ আউন্স টাটকা লেমোনেডও খাওয়া যেতে পারে। ২ আউন্স লেবুর রসের সঙ্গে ৬ আউন্স পানি মিশিয়ে নিতে হবে। সকালে ব্রেকফাস্টের আগে এবং রাতে শোয়ার আগে লেবুর রস খেয়ে নিতে হবে। এভাবে কয়েক দিন নিয়মিত খেলে কিডনির পাথর দুর হয়।

আমাদের কিডনির ভেতরের এই পাথরগুলো মূত্রনালির মাধ্যমে মূত্রথলিতে যাওয়ার চেষ্টা করে। পাথর যখন সংকীর্ণ নালির মধ্যে দিয়ে যায়, তখন প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনও কখনও নালিটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় অপারেশন ছাড়া পথ থাকে না। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব হাউস্টনের গবেষকরা বলছেন, লেবুর রসে হতে পারে মুশকিল আসান। লেবুর রসে হাইড্রক্সিসিট্রেট থাকে। যা কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। 



৮. চোখ ভালো রাখে।
 যেকোনও লেবুই চোখের পক্ষে ভালো। লেবুতে ভিটামিন সি থাকে। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। তাই লেবু খেলে চোখ ভালো থাকে ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

৯. ওজন কমায়
লেবুতে ওজন কমাতে সাহায্য করে। লেবুতে থাকা পেকটিন ফাইবার খিদে কমাতে সাহায্য করে। সকালে উঠে লেবু দিয়ে গরম পানি খান। সারা দিন কোন খাবার খাবেন, কোনটা খাবেন না তা বেছে নিতে সাহায্য করে লেবু পানি।

১০. স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে 
২০১২ সালের এক গবেষণা অনুসারে, সাইট্রাস ফলের ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি মহিলাদের মধ্যে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।৭০,০০০ মহিলাদের উপর ১৪ বছরের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সবথেকে বেশি সাইট্রাস ফল খেয়েছেন তাদের মধ্যে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি ১৯ শতাংশ কম ছিল, ইসকেমিক স্ট্রোক সবচেয়ে সাধারণ ধরণের স্ট্রোক। যখন রক্ত ​​জমাট বাঁধা মস্তিস্কে রক্তের প্রবাহকে বাধা দেয় তখন এটি হতে পারে। ২০১৯ সালে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘমেয়াদী, ফ্লেভোনয়েডযুক্ত খাবারের নিয়মিত ব্যবহার ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যে ব্যক্তিরা প্রচুর ধূমপান করেন বা মদ পান করেন তাদের উপকারের সম্ভাবনা কম।

অতিরিক্ত লেবু সেবনে কিছু অপকারিতাও রয়েছে, সংক্ষেপে তা  তুলে ধরা হলো
১. দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়া
২. ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
৩. মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে

১. দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়া
বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু পানি সেবন করেন তাদের দাঁতের এনামেল এবং ডেন্টিং ক্ষয় হয়। এবং হাইপারসেনসিটিভিটি অনুভব হতে পারে। লেবু অতিরিক্ত এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্যান্য কোমল পানীয়র মত অতিরিক্ত লেবুর রস সেবন করার ফলে দাঁতের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি হতে পারে। দাঁত ভালো রাখতে লেবুর জল খাওয়ার পরে ব্রাশ করে ফেলা ভালো। দাঁত ভালো রাখতে অবশ্যই দৈনিক দু’বার ব্রাশ এবং ফ্লসিং করা উচিত।

২. ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে বহুমূত্র রোগের সমস্যা হতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন এমন কোনো গবেষণা নেই যা প্রমাণ করে অতিরিক্ত লেবু রস আমাদেরকে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা ফেলতে পারে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর রস ব্যবহার করেন এবং আপনার এই অভিজ্ঞতা হয়, তবে আপনাকে বুঝতে হবে এটি লেবুর রসের কারণে নয় বরং পানিজাতীয় অন্য কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে ।তবে একটি বিষয় মানা হয় যে লেবুর মত এসিড জাতীয় ফল প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে,যদি আপনি বহুমূত্র অথবা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য এক সপ্তাহ লেবুর রস গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারেন অথবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

৩. মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে
কিছু কিছু মানুষের জন্য লেবুর পানি সেবন করা তাদের মাইগ্রেনের সমস্যার কারণ হতে পারে। গবেষণা অনুসারে আপনি যদি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে বেশি লেবু পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই আপনার জন্য ভালো,হয়তোবা এটি আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে অথবা আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা ফিরিয়ে আনতে পারে।




Next Post Previous Post