কিভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করবেন


কিভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করবেন?

১৯৮৩ সালে সিটি কর্পোরেশন নিয়ম অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স শুরু হয়। সেই সময় থেকে ব্যবসায়ীরা সরকারের নিয়ম মেনে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক একটি ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। আবার বিভিন্ন ট্রেড লাইসেন্সের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা প্রয়োজন। আপনি যদি শিল্পের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পেতে চান, তাহলে আপনার আরও নথি প্রয়োজন। কারণ  শিল্প বাণিজ্য অন্যান্য ছোট ব্যবসার মতো নয়। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশে ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স পেতে আপনাকে কি করতে হবে? এবং আপনি ট্রেড লাইসেন্স কোথায় থেকে পাবেন ও কিভাবে পাবেন। সে বিষয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আপনি ট্রেড লাইসেন্স কোথায় থেকে পাবেন?

প্রতিটি স্থানীয় সরকার থেকে ব্যবসা লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যেখানে ব্যবসা পরিচালিত হয়।  ধরা যাক, আপনি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান এবং ব্যবসার অবস্থান উত্তরায়। ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অফিসে। আপনি যদি বিভিন্ন শহরে একই ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তাহলে আপনি যে এলাকায় কাজ করার পরিকল্পনা করছেন সেখান থেকে আপনাকে অবশ্যই আলাদা ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এমন কি অত্র এলাকার ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে। 

ট্রেড লাইসেন্স
বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসায়িক সত্তার জন্য ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। এটি সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সরকার দ্বারা জারি করা হয়। প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে যেখানে এটি কাজ করে। যদি একটি ব্যবসায়িক সত্তার একাধিক ব্যবসার জায়গা থাকে,তবে তাকে অবশ্যই প্রতিটি স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এটি এক বছরের জন্য জারি করা হয় এবং বার্ষিক নবায়ন করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স কিছু সরকারী ফি নির্ধারণ করা হয়, যা সাধারণত ব্যবসার ধরণগুলির উপর নির্ভর করে। 

নিচে, আমরা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে পরিচালিত ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছি। অন্যান্য স্থানীয় সরকারেরও একই নিয়ম রয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের (সিসি) অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

১. সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স ঃ এটি বাণিজ্যিক লাইসেন্সের বিভাগ যা বাণিজ্যিক বা উত্পাদন ব্যবসা ব্যতীত সমস্ত ধরণের ব্যবসায়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. বাণিজ্যিক বাণিজ্য লাইসেন্স ঃ এই ট্রেড লাইসেন্সটি একজন ব্যক্তি বা একটি পৃথক আইনী ব্যবসায়িক সত্তার জন্য প্রয়োজন যা বাণিজ্যিক ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়, যেমন খুচরা দোকান ইত্যাদি।

৩. ম্যানুফ্যাকচারিং ট্রেড লাইসেন্স ঃ উৎপাদন ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের জন্য উৎপাদন বাণিজ্য লাইসেন্স প্রয়োজন। এই ধরনের ব্যবসায় সাধারণত কারখানা বা শিল্প থাকে। 

একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়া:
পদক্ষেপ-১: সিটি কর্পোরেশনের অফিস থেকে আবেদন ফর্মটি সংরক্ষণ করুন।
ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের জন্য সিটি কর্পোরেশনের (সিসি) দুটি ফর্ম রয়েছে। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই "কে" ফর্ম ব্যবহার করতে হবে। যদিও দশটি জোনাল অফিস একই "কে" ফর্ম ব্যবহার করে, একটি ব্যবসায়কে অবশ্যই নিজ নিজ জোনাল অফিস থেকে ফর্ম কিনতে হবে। একটি সিল এবং ফর্ম বিক্রিকারী কর্মকর্তার আদ্যক্ষর যা এটিকে অন্যান্য অঞ্চলের থেকে আলাদা করে।

পদক্ষেপ-২: স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার থেকে একটি প্রশংসাপত্র নিন। এবং ফর্মটি পূরণ হওয়ার পরে এটি স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে যাচাইয়ের জন্য জমা দিতে হবে।

পদক্ষেপ-৩: সিটি কর্পোরেশনের অফিস থেকে একটি লাইসেন্স বই ও স্লিপ বই সংগ্রহ করুন। আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী নির্ধারিত ফি’র সাথে সাইনবোর্ড ফি লাইসেন্স ফির ৩০% প্রদান করতে হবে। এবার ফি’র নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিন। পরবর্তীতে ব্যাংকে ফি জমার প্রমাণাদি, ও আপনার ব্যবসায়িক সকল ডকুমেন্ট সহ সিটি কর্পোরেশনের অফিসে জমা দিতে হবে। সাথে যে সকল কাগজপত্র লাগবে তা নিচে দেওয়া হল।

ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহঃ   
•  নির্ধারিত ট্রেড লাইসেন্স আবেদন ফরম
•  মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
•  মালিকের পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি
•  একটি হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের রসিদ বা প্রতিষ্ঠান ভাড়ার চুক্তিপত্র
•  একটি কোম্পানি ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট
•  মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশনের একটি প্রত্যয়িত কপি
•  একটি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
•  সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ম-কানুন মেনে চলার জন্য নন-জুডিশিয়াল  স্ট্যাম্পের ঘোষণা
•  কোম্পানির আর্থিক/ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের অনুলিপি
•  ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (টিআইএন)
•  অংশীদারিত্বের একটি চুক্তিপত্র 
•  বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) থেকে ওয়ার্ক পারমিট
•  পরিচালক বিদেশী হলে পাসপোর্টের কপি।

পদক্ষেপ-৪: লাইসেন্সিং সুপারভাইজার(এলএস)দ্বারা তদন্তের জন্য অপেক্ষা করুন।
ফর্ম জমা দেওয়ার পর, এলএস সাধারণত প্রদত্ত তথ্য যাচাই করার জন্য একটি পরিদর্শনের জন্য ব্যবসায়িক সংস্থার কাছে যায়। এলএস এর সকল পরিদর্শন শেষে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে সিটি কর্পোরেশনের (সিসি) অফিসে যেতে বলা হয়। সেখান থেকে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড 
লাইসেন্সটি সংগ্রহ করুন। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেটের একটি নমুনা নিন্মরূপঃ

কিভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করবেন?
ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেটের নমুনা

বাংলাদেশে সাধারণ ব্যবসার জন্য কিভাবে একটি ট্রেড লাইসেন্স পেতে হয় সে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিচ্ছি, ধাপে ধাপে পদ্ধতিগুল অনুসরণ করুন:
ধাপ ১ | সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা অফিস থেকে প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র সংগ্রহ করা।
ধাপ ২ | ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনপত্র পূরণ করুন।
ধাপ ৩ | প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি সাজান।
ধাপ ৪ | পূরণকৃত আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিন।
ধাপ ৫ | লাইসেন্সিং সুপারভাইজার দ্বারা আবেদনপত্র এবং সহায়ক দলিল যাচাই করা।
ধাপ ৬ | পরবর্তী, প্রয়োজনীয় ফি সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
ধাপ ৭ | যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাইয়ের পর সন্তুষ্ট হয়, তাহলে এটি আবেদনকারীকে একটি    ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
ধাপ ৮ | সিটি কর্পোরেশন/ পৌর কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ।

এভাবে প্রতিটি ব্যবসায়িক সংস্থাকে প্রায় একই নিয়মে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। শুধু কিছু ডকুমেন্টস ও ফি এর পরিবর্তন রয়েছে। 

আপনি যখন লিমিটেড কোম্পানি খুলতে যান, তখন আপনাকে অবশ্যই এই ২ টি নথির প্রয়োজন হবে। ১। কর্পোরেশনের প্রশংসাপত্র ও ২। নিবন্ধের স্মারকলিপি।

আবার, আবাসিক হোটেল এবং প্রিন্টিং প্রেসের জন্য প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন। এগুলোর জন্য আপনাকে অত্র এলাকার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যখন একটি রিক্রুটিং এজেন্সি খুলতে যাবেন, তখন আপনার ম্যান পাওয়ার এক্সপোর্ট ব্যুরোর লাইসেন্স প্রয়োজন। একইভাবে, আর্ম এবং গোলাবারুদের জন্য আর্ম লাইসেন্সের অনুলিপি। সিভিল এজেন্সির কপি বেসামরিক বিমান চলাচল থেকে।

বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্স করা বেশি জটিল নয়। অন্যান্য দেশের মত নয়, এটি অতি সহজ। শুধু আপনার ট্রেড লাইসেন্স থাকার জন্য, আপনাকে সঠিক প্রক্রিয়াটি জানতে হবে। প্রতিটি একক উদ্যোক্তার একটি ট্রেড লাইসেন্স থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে, ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনার কাজে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন ফরম এর জন্য এখানে ক্লিক করুন

বাংলাদেশে ই-ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য লগইন করুন এখানে

বাংলাদেশে ই-ট্রেড লাইসেন্স ভেরিফিকেসনের জন্য এখানে ক্লিক করুন






Next Post Previous Post