সন্তানকে আয়ত্বে আনতে কিছু কার্যকরী টিপস

সন্তানকে আয়ত্বে আনতে কিছু কার্যকরী টিপস

সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যেকটা বাবা মার এটা যেন অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে, প্রায়  শিশু কিশোর  আজ তার বাবা-মায়ের কথা ঠিকমতো শোনেনা- “বাচ্চারা দিন দিন আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে”। যেহেতু এখনকার সময় তথ্য প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ হাতের মুঠোয় অনেককিছু পেয়ে যাচ্ছে তাই আগেকার দিনের বাচ্চা আর এখনকার দিনের বাচ্চাদের মধ্যকার তফাৎটা চোখে পড়ার মতো। সময়ের আগেই আজকাল বাচ্চারা অনেক কিছু বুঝে ও জেনে ফেলেছে।


আর এটাই আমাদের মানতে সমস্যা হয়। আমরা ভাবি যে, বাচ্চারা থাকবে বাচ্চাদের মতো, বড়দের মতো আচরণ করবে কেন? এখান থেকেই এইসব সমস্যার সৃষ্টি, বাচ্চারা অকারণেই বেশি জেদ করছে। বাচ্চা কোনো কথা লুকাচ্ছে না তো? বাচ্চা কি কোনো মিথ্যে বলছে! মোট কথা বাচ্চা আয়ত্বের বাইরে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে যায় অনেক পরিবার। তাই সন্তানকে আয়ত্বে আনতে কি করতে হবে তা জানতে হবে আমাদের।


প্রত্যেকটা সন্তান বাবা মায়ের আয়ত্বে থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক। তার জন্য আবার কৌশলের দরকার কি? এমন কথা মনে হতেই পারে। তবে বাবা-মায়ের কিছু ভুলের জন্য সন্তান হতে পারে অবাধ্য। তাই সন্তাকে সঠিক শিক্ষা দিন যাতে সে আপনার অনুগত সন্তান হতে পারে।  


তাই চলুন, সন্তানকে আয়ত্বে আনতে কি করতে হবে তা জানতে আজ আপনাদের সাথে কিছু টিপস শেয়ার করি যাতে করে আমাদের অবাধ্য সন্তানকে আয়ত্বে আনা যায়। যুগ যখন এগিয়ে যাবে তখন আমরা নিশ্চয়ই আমাদের সন্তানদের পিছিয়ে রাখতে রাজি নই। এজন্যেই সবকিছুর মধ্যেও যেন কোনো সমস্যার বা জটিলতার সৃষ্টি না হয় সেই চেষ্টা করতে হবে।

সন্তানকে আয়ত্বে আনতে কিছু কার্যকরী টিপস

অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চান : আমরা যদিও সন্তানের চেয়ে বয়সে এবং বিবেক-বুদ্ধিতে বড়, তবুও এটা মানতেই হবে যে কোনো মানুষই ভুলের বাইরে নয়। আপনি যখন বুঝতে পারছেন আপনার কোনো ভুল হয়ে গিয়েছে এবং আপনি সেটার জন্য অনুতপ্ত, কোনো দ্বিধা না করে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিন। এতে আপনি যেমন আপনার সন্তানের নিকট স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকবেন তেমনি আপনার সন্তানও আপনার কাছ থেকে এই মহৎ শিক্ষাটি পেয়ে যাবে। তখন পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে অহেতুক দূরত্ব বা ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না। এমনকি এই অনুতপ্তর শিক্ষা বড় হলেও তার মাঝে থাকবে। 
   
কোন কিছু বয়স দিয়ে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন : শুধু মাত্র বয়সে বড় বলে আপনি এটা অনুমান করবেন না যে আপনার সকল সিদ্ধান্ত বা কাজ সব সময় ঠিক এবং সন্তানের নিজের মতামত সবসময় ভুল। সন্তানকে সবসময় একজন আলাদা সত্ত্বার মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার নিজের পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিন। তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন এবং তার মতামত যুক্তিসংগত হলে তা যদি আপনার মতের সাথে সাংঘর্ষিকও হয়, তবুও রিয়েক্ট না করে ঠান্ডা মাথায় মেনে নিন। এবং তাকে সময় নিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করুন।


কাজের প্রশংসা করুন ও ধন্যবাদ দিন : আপনার সন্তান যখন কোনো ভালো কাজ করবে তখন তার প্রশংসা করে তাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন। পজেটিভ কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন পারলে কাজের জন্য তাকে পুরষ্কার দিন। এতে করে তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে তেমনি আরো বেশি ভালো কাজ করতে উৎসাহ পাবে। তেমনি ভুল কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে।


সন্তানকে তা-ই বলুন যা আপনি নিজেও পালন করেন: শিশুরা তাদের বাবা-মায়েরা কী বলছে সেটা নয়, কী করছে সেটাই অনুকরণ করে। কাজেই আপনার সন্তানকে এমন কিছু করতে বলবেন না যা আপনি নিজেই করেন না। আর একই কথা বার বার বলবেন না। একই কথা বার বার বললে তার গুরুত্ব কমে যায়। এর চেয়ে ১ বার বলুন। তাকে বুঝতে দিন না শোনার শাস্তি। 


নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে শিক্ষা দিন : অনেক ছেলেমেয়ে বেড়ে উঠার সাথে সাথে মিথ্যে বলার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাবা মায়ের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব। সন্তান যখন আপনাকে সরাসরি কোনো কিছু শেয়ার করতে ভয় পাবে তখনই তার মাঝে মিথ্যে বলে নিজের ভুলকে আড়াল করার প্রবণতা দেখা দেবে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই আপনার সন্তানকে নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে শিক্ষা দিন। সে জন্য সন্তানদের সাথে সবসময় সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। 
  
সন্তানের আত্মমর্যাদাবোধকে নষ্ট করবেন না: শিশুদেরও যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। আমরা হয়তো অন্যের সামনে তাকে বকাবকি করি, ভুল ধরিয়ে দেই, মারধর করি। ভুল করলে মাশুল পেতে হবে, প্রয়োজনে শাস্তি দিন কিন্তু অন্যের সামনে তা কখনই করবেন না। আপনার সন্তান যদি বোঝে যে আপনার কথা না শুনেও সে পার পেয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে অবাধ্য হতে উৎসাহ পাবে। তাই সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি না করে শান্ত থাকুন, কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে দৃঢ় হতে ভয় পাবেন না। কারণ সন্তান যদি বুঝতে পারে যে এই অবাধ্য হবার জন্যে তাকে শাস্তি পেতে হয়, তাহলে সে শূদ্রে নেবে।


সঠিক-ভুল এবং উপকার-অপকার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিন : সন্তানকে আয়ত্বে আনতে ভুল এবং সঠিক ধারণা দিন। সঠিক কাজের জন্য যেমন তাকে পুরষ্কৃত করবেন তেমনি ভুল কোনো কাজ করলে কখনোই তাকে তিরষ্কার করবেন না। বরং অন্য সময় যেন এরকম ভুল না হয় সেটা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন। এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে তাকে সাহায্য করুন, তার পাশে থাকুন। দেখবেন যে কোনো ভুলে বা সমস্যায় পড়লে সে আপনাকেই সবার আগে বলবে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। ফলে দ্বিতীয়বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না আর আপনিও থাকবেন নিশ্চিন্ত।

[ আরো পড়ুন :> আপনার সন্তানের জন্য শিক্ষনীয় সেরা ১০টি মোবাইল অ্যাপস ]



সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন : অনেক ক্ষেত্রে বাবা মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়ে উঠে না। ফলে সন্তান কি করছে না করছে, কার সাথে মেলামেশা করছে কোনো কিছুর খেয়াল থাকে না। এই সুযোগে সন্তান খারাপ পথে যাওয়ার সুযোগ পায়। বাবা-মাকে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে যেন কোনো মতেই কমিউনিকেশন গ্যাপ না আসে।

সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে তাদের পর্যাপ্ত সময় দিন। ছুটির দিনে বাইরে ঘুরতে যান, বাসায় নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ান। তাদের কথা শুনুন, খেলাধুলা করুন। সন্তানকে আয়ত্বে আনতে হলে অবশ্যই সন্তানকে বুঝতে হবে, বকাঝকা করে কঠোর হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হিতের বিপরীত হতে পারে। সন্তানকে পারতপক্ষে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন, নিজের সাথে সম্পর্ক সহজ করে নিন।


আপনার অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন সন্তানের মধ্যে দেখতে যাবেন না: বাবা-মায়েরা অনেক সময় তাদের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চান তার সন্তানের মধ্যে। ফলে সন্তানের জীবনের লক্ষ্য কী হবে তা তারাই ঠিক করে দেন সন্তানের চাওয়া বা সামর্থ্যের বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে। আর পরবর্তীতে তার মাশুল দিতে হয় সন্তানকেই। সে না পারে বাবা-মায়ের চাওয়া পূরণ করতে, না পারে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে। কাজেই বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ের পরে তার সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে চিন্তা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতা দিন।


সন্তানকে আয়ত্বে আনতে এবং সন্তানের ভালোর জন্য অবশ্যই উপরের উল্লেখ্য বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যাকে কঠিন করলেই কঠিন, আবার সমস্যাকে আন্তরিকভাবে মোকাবেলা করলে সব সমস্যারই একটা সমাধান আছে। ভালো থাকুক আপনার সন্তান, ভালো থাকুক প্রতিটি পরিবারের সকল সদস্য।


Next Post Previous Post