বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এশিয়ার সর্ববৃহত্তম পার্ক - বাংলাদেশ
অনেকটা দূর থেকেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দৃষ্টিনন্দন ফটক। সেটি পেরুলেই সারি সারি ফুল গাছ, আপনাকে স্বাগত জানাবে বাঘ, সিংহ, বাজপাখি, ক্যাঙ্গারু সহ নানান প্রজাতির পশু পাখি। এমনকি বহু আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত ডাইনোসরও রয়েছে আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য। তবে এগুলো প্রাণহীন, মাটি বালু ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য।
মূল ফটক পার হলেই দেখতে পাবেন গভীর শালবনের ভেতর তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল ইটের সীমানা প্রাচীর। ভেতর দিয়ে অসংখ্য সরু পিচঢালা সড়ক। দুদিকে শাল, গজারিগাছসহ নানা প্রজাতির গাছে আচ্ছাদিত। বিশাল অরণ্যে আপনি বের হয়েছেন প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের আশায়, কিন্তু হঠাৎ ক্ষুধার্থ কয়েকটি হিংস্র বাঘ বা সিংহ আপনার উপর আছড়ে পড়ল শিকারের আশায়, কিন্তু না পারল না, কাঁচের দেয়াল থাকার কারণে ২ ইঞ্চির জন্য আপনাকে গ্রাস করতে পারল না।
কিন্তু আপনি তো ভয়ে প্রায় জ্ঞানহারা, এমন সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আপনাকে অনুভূতিকে স্পর্শ করার জন্যই থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও এশিয়ার সর্ববৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এটি নির্মিত হয়েছে গাজীপুরে।
সাফারি পার্ক হচ্ছে বন্য প্রাণীর একপ্রকার অভয়ারণ্য। যেমন চিড়িয়াখানায় বণ্য প্রাণীরা বন্দি থাকে ও মানুষ থাকে খোলা অবস্থায়। কিন্তু সাফারি পার্কে মানুষ থাকবে বন্দি আর বন্যপাণীরা থাকে খোলা অবস্থায়। এশিয়ার সর্ববৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি তিন হাজার ৬৯০ একর জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে মোট পাঁচটি অঞ্চলের সমন্বয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, সাফারি পার্ক কিংডম, কোর সাফারি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক ও বায়োডাইভারসিটি পার্ক এভাবে বিভক্ত করা হয়েছে।
[ [ আরো পড়ুন : ঢাকার কাছেই সেরা কয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র ] ]
এখানে যা রয়েছে, পার্কের ভেতরে প্রথমেই অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। পার্ক সমন্ধে যেকোনো তথ্য জানার জন্য এখানে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। আরো রয়েছে সমস্ত পার্কের ম্যাপ যা দেখে দর্শনার্থীরা পার্ক সমন্ধে বিস্তারিত জানতে পারে ও পাশে আছে একটি পার্ক অফিস। জীববিজ্ঞানের নানা তথ্য ও গবেষণার জন্য রয়েছে ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির মেরুদণ্ডি ও অমেরুদণ্ডি প্রাণীর দেহাবশেষ, স্পেসিমেন ও স্টাফিং সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। সাফারি পার্কের এক হাজার ৩৩৫ একর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কোর সাফারি পার্ক। এখানে বন্য পরিবেশে বন্য প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করছে। সাফারি পার্কের মূল আকর্ষণের মধ্যে এটি একটি।
এখানে আপনি পার্কের গাড়িতে চড়ে বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, বিভিন্ন জাতের চিত্রা হরিণ, হাতি, জলহস্থি, নীল গাই, বন্য মোষ সহ ইত্যাদি। ৫৭৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আফ্রিকান সাফারি পার্ক। কোর সাফারি পার্ক অঞ্চলে রয়েছে আফ্রিকান বন্যপ্রাণীর বিশাল সংগ্রহ। বিশাল দেহ আর লম্বা গলার জিরাফ আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সদা প্রস্তুত। এখানে আরো বিচরণ করে বন্যপ্রাণী জেব্রা, গাধা, ঘোড়া সহ আরো অনেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী । এখানে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট ও পেলিকেন আইল্যান্ড।
আপনি যদি পাখি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহেলে চলে যান পাখিশালায়। পাখির খাঁচার কাছে যেতেই আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবে নানা প্রজাতির রং-বেরঙের দেশি-বিদেশি পাখি দেখে। বিরল, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছের জিনপুল সংরক্ষণের জন্য ৯৬৫ একর জায়গাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে বায়োডাইভারসিটি পার্ক। আপনি এসব বণ্যপ্রাণী দেখতে দেখতে ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত হয়ে গেলে আপনার জন্য আছে দুর্দান্ত খাবার হোটেল, মানে টাইগার ও লায়নের আদলে তৈরি রেস্টুরেন্ট। সেখানে গিয়ে খাবার হয়ে বাঘ সিংহের পেটে যাওয়ার কথা ভাবছেন তাই না? না ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, বাঘ ও সিংহ আপনাকে খাবে না।
আপনি খাবার খাবেন আর বাঘ ও সিংহ আপনাকে পাহারা দেবে, মাঝখানে থাকবে কাঁচের দেয়াল। চলুন এবার উঠা যাক ওয়াচ টাওয়ারে। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে আপনি দেখতে পাবেন সমগ্র সাফারি পার্কের মনোরম দৃশ্য। দেখতে পাবেন পার্কের ভিতর বিচরণরত বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ ইত্যাদি বন্যপ্রাণী।
সাফারি পার্কে বিচরণরত বন্য পশুপাখির পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আছে আটটি জলধারা ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ। যেখানে বিভিন্ন জাতের দেশি বিদেশি বুনো হাঁসের ওড়াউড়ি সহ নানা রকম জলকেলি যা আপনার মন ভরিয়ে দিবে। আপনি যদি সাহসী হয়ে থাকেন তাহলে চলে আসেন স্নেক পার্কে- এখানে আপনি হরেক রকম সাপ দেখতে পাবেন। এ ছাড়াও আপনাকে আনন্দিত রাখার জন্য এখানে আছে বাটারফ্লাই পার্ক যেখানে প্রতিনিয়ত নানান রঙের প্রজাপতিরা খেলা করছে।
বাংলাদেশের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন রাজধানীর অতি নিকটে ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাসহ সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টিই মূলত এই সাফারি পার্কের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশেই তৈরী এশিয়ার বৃহত্তম এই সাফারি পার্কে সময় নিয়ে ঘুরে আসুন পরিবার পরিজন নিয়ে আর উপভোগ করুন জনপ্রিয় এই জায়গাটি। শিশুদের সঙ্গে বড়দেরও ভালো লাগবে এইসব আয়োজন।