কম্পিউটার ভাইরাস কি ? কিভাবে আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখবেন।

ভাইরাস কম্পিউটারের কি ক্ষতি করে এবং কিভাবে আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখবেন।

প্রতিটি ভাইরাস কম্পিউটারের বা ল্যাপটপের জন্য ক্ষতিকর। আপনার কম্পিউটারে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, কম্পিউটারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে যায়। ফলে কম্পিউটারটি স্লো হয়ে যায়। এমনকি কম্পিউটারে থাকা প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো অকেজো হয়ে যায়। ফাইলগুলোকে পুণরুদ্ধার করতে অনেক সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে হয়। কোন কোন সময় ফাইলগুলো ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। তাই আজ আমরা জানবো কিভাবে আপনার কম্পিউটার ভাইরাসমুক্ত রাখবেন।

ভাইরাস আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর কি ক্ষতি করে, কীভাবে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কি না? কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে কীভাবে তা মুক্ত করবেন তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের কি ক্ষতি করে 
কম্পিউটার ছাড়া আজ কোন কাজ করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমান যুগে মানুষের সব কাজকর্ম কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। কম্পিউটারের বহুবিদ ব্যবহার মানব সভ্যতাকে গতিশীল করে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে। যে প্রযুক্তি ধরে এত সফলতা সে প্রযুক্তিই যদি হঠাৎ করে ক্ষতি করতে শুরু করে তাহলে এর ক্ষতিটাও যে কত ভয়াবহ হবে তা আন্দাজ করা দুরূহ। কম্পিউটারের ক্ষতিকারক হল ভাইরাস। এটি একটি  কম্পিউটারকে চলতে চলতে হঠাৎ স্থির হয়ে এর সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। 

এ অবস্থায় কম্পিউটার পুনরায় চালু করতে হয় বিধায় সেভ না করা অনেক মূল্যবান তথ্য হারিয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনায় প্রোগ্রাম উলোট পালোট করে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত করা ছাড়াও অনেক ক্ষতিসাধন করতে পারে। যেমনঃ মেডিক্যাল রেকর্ড, এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কার্যক্রম উলোট পালোট করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। ভাইরাস সামান্য কয়েক বিট ডেটা পরিবর্তন করে হিসাব-নিকাশের বিরাট গড়মিল করে দের (যেমনঃ ব্যাংকিং সেক্টরে) বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করতে পারে। কম্পিউটার ড্রাইভে থাকা সংরক্ষিত অতি মূল্যবান তথ্য হারিয়ে ফেলতে পারে।



গুরুত্বপূর্ণ বহুল ব্যবহৃত অনেক প্রোগ্রামের এক্সিকিউটেবল ফাইলকে আক্রান্ত করে করাপ্ট করে দিতে পারে। ফলে এ প্রোগ্রামটি আর রান করবে না। প্রতিদ্বন্দ্বি বিরাট কোন কোম্পানির কমপিউটারাইজড কর্পোরেট সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে গোপনীয় অনেক তথ্য পাচার করে কোম্পানীর বিরাট ক্ষতিসাধন করতে পারে।

কোন কোন ভাইরাস হার্ডডিস্ক ফরম্যাট করে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রোগ্রাম ও তথ্য নস্ট করে দিতে পারে। ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধির কার্যক্রম করতে গিয়ে কম্পিউটারের গতিকে স্লো করে দেয়। হার্ডডিস্কের সেক্টর নষ্ট করে দিতে পারে। এতে করে ডস কোন ফাইলকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় খুঁজে পাবে না। কিছু ভাইরাস হার্ডডিস্কের বুট সেক্টরে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত হার্ডডিস্ক ফরম্যাট করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। ফরম্যাট করার ফলে অনেক মূল্যবান ফাইল/উপাত্ত হারাতে হয়। কিছু কিছু ভাইরাস সিপিইউ এর রিড/রাইট ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও সমস্ত প্রোগ্রাম ফাইলগুলোকে নষ্ট করে।

কম্পিউটার ভাইরাস এর কাজ কি?

কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত মানবদেহে ছড়ানো ভাইরাস গুলির মত একটি ভাইরাস। মানব দেহে ভাইরাস গুলি রক্ত ও মাংসের মাধ্যমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক একই রকম ভাবে কম্পিউটার ভাইরাস গুলি সমস্ত প্রোগ্রামের এবং অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে সমস্ত কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।

শুধু তাই নয় কম্পিউটার ভাইরাস গুলি একটি কম্পিউটার থেকে অন্য একটি কম্পিউটারে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। যদি কোন একটি ভাইরাস একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে কোন রকম ভাবে প্রবেশ করতে পারে তবে আগের কম্পিউটার টির মত নতুন কম্পিউটারটিকে সে নষ্ট করে দিতে পারে।

এই কম্পিউটার ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন আছে যেমন, প্রোগ্রাম ভাইরাস, ম্যাক্রো ভাইরাস, রেসিডেন্ট ভাইরাস, ফ্যাট ভাইরাস, বুট ভাইরাস ইত্যাদি। এই বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস গুলির বিভিন্ন প্রকার কার্যক্ষমতা আছে অর্থাৎ এদের প্রত্যেকের কাজগুলি আলাদা আলাদা। এ কথাটি মনে রাখতে হবে এই সকল কম্পিউটার ভাইরাসের কাজগুলি আলাদা আলাদা হয় তার ডেভেলপারের উদ্দেশ্য কে লক্ষ্য করে।

কারণ ডেভলপার অর্থাৎ যে এই কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করেছে সে কোন উদ্দেশ্যে তৈরি করেছে সেই উদ্দেশ্যে এই ভাইরাসটি কাজ করে থাকে। যেমন একটি ভাইরাস কে যদি কোন ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমকে নষ্ট করার জন্য তৈরি করা হয় তবে সে ওই কাজ করবে। আবার কোন ভাইরাস কে ডেভলপার যদি এমনভাবে তৈরি করে যে সেই ভাইরাসটি যে ডিভাইসে থাকবে তখন সেই ডিভাইস এর সমস্ত তথ্য ডেভলপারের কাছে নিয়ে আসবে, তখন ওই ভাইরাসটি ওই ভাবেই কাজ করবে।
 
সুতরাং বুঝা গেল ভাইরাস প্রস্তুতকারীর মানসিকতার উপর ভাইরাসের কাজ নির্ভর করে। তবে সকল ভাইরাস গুলির মূল উদ্দেশ্য থাকে সে যে প্রোগ্রামে ইনস্টল হবে সেই প্রোগ্রামের সবকিছুকে শেষ করে দেবে। 

কিভাবে বুঝবেন আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কি না? 

কম্পিউটারের নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা গেলে বোঝা যাবে আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। 

  • কম্পিউটারের কাজের স্পীড কমে যায়। 
  • প্রোগ্রাম লোড টাইম বেড়ে যায়।
  • কিছু অদ্ভুত এরর ম্যাসেজ প্রদর্শন করে 
  • দৈনন্দিন ব্যবহৃত ফাইলগুলোর আয়তন বৃদ্ধি পায়। 
  • ফ্রি ডিস্ক স্পেস বহুলাংশে হ্রাস পায়।
  • মাইক্রোকম্পিউটার লক-আপ হয়ে যায় ।
  • হঠাৎ কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়। 
  • কোন কাজের মাঝেই কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়।

কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
  • কম্পিউটার বা ল্যাপটপে এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটাল করে রাখা এবং নিয়মিত রান করা।
  • এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট করা।  
  • অন্যের ডিস্ক বা ফাইল ব্যবহারের আগে স্ক্যান করে নেয়া।  
  • নিয়মিত ফাইল ব্যাকআপ করা।
  • থার্ড-পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার না করা।
  • ই-মেইল ব্যবহারের সময় উপযুক্ত ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা।
  • অজানা লিঙ্ক বা পপ-আপ ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা।
  • ফ্রি সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার কম করা।
  • কম্পিউটারের সেটআপ ভাইরাস প্রতিরক্ষা সক্রিয় রাখা।
  • কম্পিউটারের উইনডোজ আপডেট রাখা।
  • এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারটি দিয়ে ড্রাইভগুলোকে স্ক্যান করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুস্মরণ করলে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থেকে রক্ষা পাবে। 



Next Post Previous Post