ডেঙ্গু জ্বরে সতর্কতা ও করণীয় - Dengue Fever (Readonbd)



ডেঙ্গু  সংক্রমণে  সতর্কতা ও করণীয়:-

ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত ভাইরাল সংক্রমণ যা একটি মারাত্মক ফ্লু-এর মতো অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং কখনও কখনও মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করে যাকে মারাত্মক ডেঙ্গু বলা হয়। ডেঙ্গু একটি দ্রুত উদীয়মান মহামারী-প্রবণ ভাইরাল রোগ যা বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৫০ বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ৩০ গুণ বেড়েছে। ৫০ টি থেকে ১০০ মিলিয়ন পর্যন্ত সংক্রমণ বেড়েছে এখন বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে প্রতি বছর ঘটবে বলে অনুমান করা হয়, যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেককে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

মারাত্মক এই ডেঙ্গুর জন্য কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসার ফলে মৃত্যুর হার 1%এর নিচে নেমে আসে। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বছরের এই সময়টিতে অস্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম আসার সাথে সাথে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ডেঙ্গুতে অসুস্থতা এবং মৃত্যু হ্রাস করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 
বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকির মধ্যে, প্রায় ৬০% এশিয়া মহাসাগরীয় দেশগুলিতে বাস করে। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিস্থিতি, অপরিষ্কার পরিবেশ, অপরিকল্পিত শহুরে বসতি এবং দ্রুত নগরায়নের ফলে মশার প্রজনন বৃদ্ধি, বিশেষ করে শহুরে এবং আধা-শহুর এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকা সহ ইত্যাদি।

যারা ডেঙ্গুতে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের জন্য লক্ষণগুলি হালকা বা গুরুতর হতে পারে।
মারাত্মক ডেঙ্গু কয়েক ঘন্টার মধ্যে জীবন-হুমকি হতে পারে এবং তৎক্ষানিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন ও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। 

লক্ষণ সমূহঃ  
ডেঙ্গুর হালকা লক্ষণগুলি অন্যান্য অসুস্থতার সাথে বিভ্রান্ত হতে পারে যেমন জ্বর, গলা ব্যথা বা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। ডেঙ্গুর সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণ দেখাচ্ছে মানুষের শরীরের গ্রাফিক হল জ্বর: চোখের ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস, পেশী ব্যথা, ফুসকুড়ি, হাড়ের ব্যথা, বমি বমি ভাব/বমি, জয়েন্টের ব্যথা।


অনেকে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোন লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব করেন না।
যেমন ফ্লু - এবং সাধারণত সংক্রামিত মশার কামড়ানোর চার থেকে ১০ দিন পরে এটি শুরু হয়।
তাই প্রথম অবস্থায় সংক্রমণের কোন লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব নাও হতে পারে। 


আবার  অধিকাংশ মানুষ এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলি আরও খারাপ হয় এবং জীবন-হুমকি হয়ে উঠতে পারে। একে বলা হয় মারাত্মক ডেঙ্গু, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। ডেঙ্গুর কারণে শরীরের উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর হয় - 104 F (40 C) এ ধরনের মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর হয়ে যখন তখন আপনার রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফুটো হয়ে যেতে পারে। এবং আপনার রক্ত প্রবাহে জমাট বাঁধার কোষের (প্লেটলেট) সংখ্যা কমে যায়। এটি শক, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, অঙ্গ ব্যর্থতা এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।  

মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরের সতর্কতা লক্ষণ-যা একটি জীবন-হুমকি জরুরী-দ্রুত বিকাশ করতে পারে। আপনার জ্বর চলে যাওয়ার পর সাধারণত সতর্কতা লক্ষণগুলি প্রথম বা দুই দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যেমনঃ তীব্র পেট ব্যথা, ক্রমাগত বমি, আপনার মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত, আপনার প্রস্রাবে রক্ত, মল বা বমি, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, যা দেখতে ক্ষত হতে পারে, কঠিন বা দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ক্লান্তি, বিরক্তি বা অস্থিরতা।

কীভাবে মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ থাকবেন:
মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হবার আগেই সতর্ক হবার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ আক্রান্ত হবার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে মৃত্যুসহ নানা ধরণের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

• ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার এই দুইটি রোগের জন্যই দায়ী এডিস মশা সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার আগে এডিস মশা কামড়ায়। ফলে এই দুই সময়ে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

• ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।
• বাড়ির ছাদে বা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনে, বাতিল টায়ার কিংবা প্লাস্টিক কন্টেইনার- কোথাও যাতে তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি পানি জমা না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
• মশার কামড় থেকে বাঁচতে নানা ধরণের রিপেলেন্ট অর্থাৎ মশা তাড়ানোর পণ্য যেমন বিভিন্ন ধরণের কয়েল, স্প্রে, ক্রিম জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা, তবে এর মাত্রা ও প্রয়োগ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। 

• এগুলো সবই মশাবাহিত রোগ। এ থেকে আক্রান্ত হবার আগের সতর্কতা। বিশেষজ্ঞরা  বলছেন, আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

মশা তাড়ানোর কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন মশা তাড়াতে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায় চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
তবে ঢাকায় মশার সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে এসব কায়দা কতটা খাটবে সে আশংকাও রয়েছে। 

অনেক বছর ধরে মশা তাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন কয়েকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো:
• নিমে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ রয়েছে। প্রাচীনকালে মশা তাড়াতে নিমের তেল ব্যবহার করা হত। ত্বকে নিম তেল লাগিয়ে নিলে মশা ধারে-কাছেও ভিড়বে না বলে প্রচলিত।
• বলা হয়ে থাকে মশা কর্পূরের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে কর্পূর দিয়ে রাখলে মশা পালিয়ে যায়।
• লেবু আর লবঙ্গ একসঙ্গে রেখে দিলে ঘরে মশা থাকে না বলে প্রচলিত আছে। এগুলো জানালায় রাখলে মশা ঘরে ঢুকতে পারবে না
• ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে রোদে শুকিয়ে সেটা জ্বালালে চা পাতার ধোঁয়ায় ঘরের সব মশা-মাছি পালিয়ে যাবে। কিন্তু এতে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হবে না।

মারাত্মক এই মশাবাহিত রোগে বা ডেঙ্গু জ্বরে একটি জীবন ঝুঁকিপূর্ণ তাই চিকিৎসা জরুরী। । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি এ সমস্ত রোগে আক্রান্ত হবার আগে আপনি/আমি সতর্ক না হই তাহলে মারাত্মক এই ডেঙ্গু বা  ফ্লু-এর মতো মশা বাহিত ভাইরাল সংক্রমণ রোগ হতে আমরা কখনওই রেহাই পাবো না। 



Next Post Previous Post